ওয়েবে নিরাপদ থাকা

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি - কম্পিউটার ও কম্পিউটার ব্যবহারকারীর নিরাপত্তা | | NCTB BOOK

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। ব্যক্তিগতভাবে মোবাইল, কম্পিউটারের ব্যবহার যেমন বেড়েছে, তেমনি ইন্টারনেট বা অনলাইনের ব্যবহারও ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। যখনই কোনো কম্পিউটার বা মোবাইল ডিভাইস ( ফোন, প্যাড, ট্যাব ইত্যাদি) অনলাইনে যুক্ত থাকে তখনই এর নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়। সতর্কতা এবং বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে এই ঝুঁকি কমানো যায়।
একজন অনলাইন ব্যবহারকারী নানান কারণে বিভিন্ন ধরনের ওয়েবসাইট ব্যবহার করেন। এখানে কয়েকটি
বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ওয়েবে নিরাপদ থাকার বিষয়টি আলোচনা করা হলো-
ক. সাধারণ সাইট : ব্যবহারকারীদের অনেকেই ইয়াহু, হটমেইল বা জিমেইলের মতো সাধারণ এবং বিনামূল্যের ই-মেইল সেবা ব্যবহার করে থাকেন। এগুলোর প্রতিটি সাইটে একাউন্ট হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। হ্যাক হলে আমাদের অনেক প্রয়োজনীয় মেইল হারিয়ে যেতে পারে। আবার ঐ একাউন্ট ব্যবহার করে প্রতারণা বা অনুরূপ কাজ হতে পারে যার দায়-দায়িত্ব ব্যবহারকারীর ওপর বর্তায়। এসব ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত সাধারণ সতর্কতাগুলো মেনে চলা দরকার

  • সহজ পাসওয়ার্ড ব্যবহার না করা - অনেকেই তাদের ই-মেইল একাউন্টের পাসওয়ার্ড হিসাবে নিজের নাম, কীবোর্ডের সহজ বিন্যাস (যেমন qwerty বা asdfg বা ১২৩৪৫৬৯৭৮) ব্যবহার করে এটি মোটেই সংগত নয় । কারণ ই-মেইলের ক্ষেত্রে ই-মেইল একাউন্ট-ই ব্যবহারকারীর নাম, যা প্রায় সবাই জানে। যে কারণে পাসওয়ার্ডটি যদি সহজ হয় তাহলে যে কেউ মাত্র কয়েকবারের চেষ্টাতেই একাউন্টটি হ্যাক করতে পারবে। এজন্য একটি জটিল বিন্যাস ব্যবহার করা উচিত পাসওয়ার্ড হিসাবে। এবং এতে অক্ষর, সংখ্যা বিশেষ চিহ্ন (!@# ইত্যাদি) ব্যবহার করা উচিত।
  • নিয়মিত পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা : কিছুদিন পর পর ই-মেইলের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা প্রয়োজন ।
  • যেসব ক্ষেত্রে দ্বিমুখী ভেরিফিকেশনের ব্যবস্থা রয়েছে সেগুলো ব্যবহার করা। যেমন, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জিমেইল অ্যাকাউন্টটির নিরাপত্তা আরও শক্তিশালী করা যায়। এ জন্য জিমেইলের 2 Step Verificaton অপশনটি ব্যবহার করতে হবে।

> প্রোফাইল থেকে অ্যাকাউন্ট সেটিংয়ে যেতে হবে। > 2 step verification এখানে এডিট অপশনে ক্লিক করতে হবে।
> মোবাইলের নম্বরটি দিতে হবে এবং সেন্ড কোড বাটনে ক্লিক করতে হবে।
> জিমেইল থেকে মোবাইলে একটি সিকিউরিটি কোড পাঠানো হবে। সেটি দিয়ে ভেরিফাই অপশনে ক্লিক করতে হবে।
> এরপর 2-step verificationটি অন করতে হবে।
এখন কেউ এই অ্যাকাউন্টে অনধিকার প্রবেশ করতে চাইলে তাকে মোবাইল কোডটি পেতে হবে এবং ব্যবহার করতে হবে। যেহেতু কোডটি একবার মাত্র ব্যবহার করা যাবে সুতরাং কেউ আগের কোডটি জানতে পারলেও অ্যাকাউন্টটি থাকবে নিরাপদ। একইভাবে ইয়াহু! মেইলেও অনুরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। সাইবার ক্যাফে বা অনেকেই ব্যবহার করে এমন কোনো কম্পিউটার থেকে ই-মেইল ব্যবহার করলে, ব্যবহার শেষে অবশ্যই অ্যাকাউন্ট থেকে লগ-আউট করতে হবে।

এছাড়া সাধারণ ওয়েবসাইট ব্যবহারের ক্ষেত্রেও কিছু বাড়তি সতর্কতা মেনে চললে নিরাপদ থাকা যায়। অনেক ওয়েবসাইটে বিশেষ ধরনের প্রোগ্রাম ইনস্টল করা থাকে। ওয়েব ব্রাউজারে কুকিজ চালু থাকলে এসব সফটওয়্যার ব্যবহারকারীর কম্পিউটার ও ব্রাউজারের বিভিন্ন তথ্য অন্যত্র পাঠিয়ে দেয়। এসব ওয়েবসাইট ব্যবহারের সময় সতর্ক থাকা প্রয়োজন। কোনো কোনো ওয়েবসাইট ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে বিভিন্ন ব্যক্তিগত তথ্য চায়। বিশেষ প্রয়োজন না থাকলে এই সকল তথ্য দেওয়ার প্রয়োজন নাই।
খ. সামাজিক সাইট : বর্তমানে অনেকে সামাজিক যোগাযোগ সাইটে নিজের ব্যক্তিগত তথ্য রেখে দেন। ব্যক্তিগত ছবিও অনেকে লেয়ার করে থাকে। ফলে ফেসবুক অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড কেউ জেনে ফেললে ভাতে ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। এক্ষেত্রে ই-মেইল সাইটে যে সকল নিরাপত্তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে তার মতো অনুরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগের সাইট ব্যবহারের সময় নিম্নোক্ত সতর্কতা মেনে চলা প্রয়োজন :

  •  কাউকে 'বন্ধু' বানানোর আগে তার সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া, বাস্তব জীবনে যে তোমার বন্ধু হওয়ার যোগ্য নয়, তাকে   বন্ধু  না করা : 
  • অপরিচিত কাউকে বন্ধু বানানোর সময় তার পরিচয় সম্পর্কে সম্যকভাবে নিশ্চিত হওয়া, এজন্য তার প্রোফাইল দেখা, পারস্পরিক বন্ধুদের মধ্যে কেউ তোমার পরিচিত কি-না সেসব বিষয় দেখে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন :
  • খুবই ব্যক্তিগত ছবি ফেসবুকে প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকা
  • মোবাইলে ফেসবুক/ই-মেইল ব্যবহার করার পর প্রতিবারই লগআউট করা;
  •  স্কুল, সাইবার ক্যাফেতে ইন্টারনেট ব্যবহার করার পর সাইন আউট করা; বন্ধুর বা পরিচিত কারো কম্পিউটার ব্যবহারের সময় সতর্ক থাকা; এবং
  • কোনো অপরিচিত ব্যক্তির কাছ থেকে কোনো ফেসবুক এপ্লিকেশন ব্যবহারের অনুরোধ এলে, নিশ্চিত না হয়ে তাতে ক্লিক না করা।

গ. বয়সোপযোগী সাইট : ওয়েবে অনেক সাইট রয়েছে যা কেবল প্রাকারকদের জন্য। এই সকল সাইটে বয়সোপযোগী নানান বিষয় থাকে যা তোমাদের জন্য উপযুক্ত নয়। এ ধরনের ওয়েবসাইট ব্যবহারের ফলে নিরাপত্তা বিঘ্নিত তথা যন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ওয়েবসাইটে দৃশ্যমান অনাকাঙ্ক্ষিত চিত্র বা বিজ্ঞাপনে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকতে হবে। তোমাদের তথ্য প্রযুক্তির বিকাশের সাথে সাথে নৈতিক উন্নয়নে সচেষ্ট হতে হবে।                                                           

Promotion